শেখ হাসিনাকে বলছি : এই ন্যাম’-এ নয়, নতুন ন্যাম’-এ যোগ দিন।এন.সি- ৯২

শেখ হাসিনাকে বলছি : এই ন্যাম’-এ নয়, নতুন ন্যাম’-এ যোগ দিন
Related imageশেখ হাসিনা সম্প্রতি ‘ন্যাম সম্মেলন’ শেষ করে দেশে ফিরেছেন। ন্যাম অর্থ- Non-Aligned Movementবা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যখন গণহারে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হওয়া শুরু হয় তখন দুটি ব্লক ছিলো- একটি ইস্টার্ন ব্লক, অন্যটি ওয়েস্টার্ন ব্লক। ইস্টার্ন ব্লকে ছিলো সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও তার মিত্ররা। অপরদিকে ওয়েস্টার্ন ব্লকে ছিলো আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের দেশসমূহ। এই দুই ব্লকের দ্বন্দ্বকে বলা হয়- কোল্ড ওয়্যার বা স্নায়ু যুদ্ধ। তখন এই ইস্টার্ন ব্লক আর ওয়েস্টার্ন ব্লকের দ্বন্দ্বের মধ্যে প্রবেশ না করে নুতন একটা ব্লক তৈরীর সিদ্ধান্ত নেয় যুগশ্লাভিয়ার মার্শাল টিটো, যার নাম দেয় Non-Aligned Movementবা জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন বা ন্যাম। মার্শাল টিটো’র বক্তব্য ছিলো- নতুন সৃষ্টি হওয়া রাষ্ট্রগুলো এমনিতেই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল, এখন যদি তারা ইস্টার্ন আর ওয়েস্টান ব্লকে যোগদান করে তবে তাদের অবস্থা আরো খারাপ হবে। তাই ‘ন্যাম’ নামক নিরপেক্ষ ব্লকে যোগদান করা রাষ্ট্রগুলো আপাতত কোন ব্লকে যোগ দিবে না। তারা আপাতত নিরপেক্ষ থেকে নিজেদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিকে দৃষ্টি দিবে। মার্শাল টিটোর এই Non-Aligned Movement থিউরী বেশ কাজ দেয় এবং বেশ কিছু দেশ সেখানে যোগ দেয়। কিন্তু এতে ক্ষিপ্ত হয় মূল ব্লকগুলো। তারা চেষ্টা চালায় ন্যামকে ভেঙ্গে ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলোকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে নিজ ব্লক ভারি করতে। ১৯৮০ সালে মার্শাল টিটোর মৃত্যু এবং ১৯৯২তে যুগোশ্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়ার মাধ্যমে বাস্তবে চূড়ান্তভাবে Non-Aligned Movementএর মৃত্যু ঘটে। বর্তমানে যে ন্যাম সম্মেলন চলতেছে, আসলে এটা একটা ফেক সম্মেলন, এবং এর প্রায় সব সদস্যই কোন না কোন ব্লকের হয়ে কাজ করছে, তাই একে জোট নিরপেক্ষ বলা যায় না।
তবে আশার কথা এই যে, বর্তমান পৃথিবীতে নতুন একটি নিরপেক্ষ ব্লক হওয়ার আশা দৃশ্য মান হচ্ছে। যেটা মূল ব্লকগুলো থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে অনেকটা Non-Aligned Movementএর মত করে নতুন কিছু করতে চাইছে। এই ব্লকে অন্যতম তিন জন সদস্য বেশ সক্রিয়- তুরষ্কের এরদোয়ান, পাকিস্তানের ইমরান খান এবং মালয়েশিয়ার মাহথির (আনোয়ার ইব্রাহিম)।
বর্তমানে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। বিশেষ করে পশ্চিমের দুই ব্লক- ডেমোক্র্যাটিক এবং রিপাবলিকান ব্লক দুটোই আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে অবস্থান করছে। আবার রাশিয়ান ব্লকের শক্তি যা নেহেরু পরিবার তথা কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে আসতো, সেটাও এখন দুর্বল। ভারতে রিপাবলিকান মোদির দ্বারা ভারতীয় কংগ্রেস নিজেই এখন কোনঠাসা, সে অন্যকে কি পলিসি দিবে ? অপরদিকে চীনের শুধু অর্থনৈতিক এজেন্ডা দৃশ্যমান, কিন্তু রাজনৈতিক পলিসির দিক থেকে একেবারেই শূণ্য।
তাই রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের থাবা থেকে বাঁচতে নতুন কোন ব্লকে যোগ দেয়া এখন শেখ হাসিনার জন্য জরুরী হয়ে গেছে। এবং সেটার একমাত্র অপশন নতুন তৈরী হওয়া এরদোয়ান-ইমরান-মাহথিরের নব্য Non-Aligned Movement-ই বলা যায়, যাদের রাজনৈতিক পলিসিগুলো সম্রাজ্যবাদী ব্লকগুলোর পলিসি থেকে উন্নততর বলে প্রমাণিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত-ই।