সৌদিতে গিয়ে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে,। এন.সি-৬৮

Image result for তালা
সৌদিতে গিয়ে নারীরা নির্যাতিত হচ্ছে,
কিন্তু দেশের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয় জামালপুর বা দিনাজপুরের ডিসি অফিস কিংবা খুলনায় রেলওয়ে থানার ভেতরে কি নারীরা নির্যাতিত হয়নি? হয়েছে।
আসলে সমস্যাটা সৌদিতে নয়, সমস্যাটা নারীকে আমরা কোথায় নিরাপত্তা দিতে পারলাম সেটা নিয়ে।
কিন্তু ঘটনা হলো- নামের সাথে সৌদি থাকায়, একটা মহল সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানো নিয়ে অনেক মিডিয়া কাপাচ্ছে। এই মিডিয়া কাপানোওয়ালাদের আসল উদ্দেশ্য কি নারীকে হেফাজত করা নাকি নামের সাথে সৌদি থাকায় সেটা টেনে এসে ইসলামের সাথে মিলিয়ে দেয়া, এটা একটু যাচাই করা দরকার।
কয়েক বছর আগে, যখন সৌদিতে নারী কর্মী পাঠানোর একটা বড় প্রজেক্ট আসলো, তখন আমি আমার পেইজে তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম। আমার বক্তব্য ছিলো, যেহেতু ঐটা আমাদের দেশ না, তাই কোন নারী নির্যাতিত হলে আমরা কিছুই করতে পারবো না এবং অন্য দেশে নারীর সঠিক নিরাপত্তাও আমাদের পক্ষে নিশ্চিত করা সম্ভব না। তাই ঐ দেশের আমাদের দেশের নারীদের পাঠানো কখনই উচিত হবে না।
আমার মনে আছে, ঐ সময় বিদেশ গিয়ে ব্যাপক নারী নির্যাতনের খবরও ভাইরাল হয়েছিলো, যা কোন নারীর অজানা থাকার কথা না। কিন্তু তারপরও বহু নারী কেন এত কিছু জেনেও সৌদি গেলো, সেটাই চিন্তার বিষয়। এখন যেসব নারী যখন সৌদিতে গিয়ে নির্যাতিত হচ্ছে বলে চিল্লাচ্ছে, তারা কি আদৌ নির্যাতিত হয়ে চিল্লাচ্ছে নাকি লেনদেনে গণ্ডগোল হওয়ার কারণে চিল্লাচ্ছে, সেটাও যাচাইয়ের বিষয় আছে। কারণ নির্যাতন হচ্ছে জেনেও তারা গেলো কেন ?
অন্যদিক থেকে চিন্তা করলে, নারীরা নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব না, এটা জেনেও বাংলাদেশে সরকার কেন নারীদের বিদেশে শ্রমিক হিসেবে পাঠালো ? শুধু কমিশন পেলেই কি দেশের নারীদের বিদেশে পাঠাতে হবে ?
বিষয়টি তো পুরোপুরি সরকারী উদ্যোগে নারী পাচার হয়ে গেলো!
এতো গেলো বিদেশে নারী নির্যাতন। দেশেও তো ঘরের বাইরে কম নারীকে কম নির্যাতিত হতে হচ্ছে না এবং সেটা সংখ্যায় অনেক বেশি।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক দ্বারা ছাত্রীরা নির্যাতিত হচ্ছে।
অফিসে বস দ্বারা নারী স্ট্যাফ নির্যাতিত হবে।
দিনাজপুরের ডিসি, জামালপুরের ডিসি তার অধিনস্ত নারীদের থেকে সুযোগ নিচ্ছে।
বাসের হেলপার নারী যাত্রীদের উঠানোর সময় গায়ে দিচ্ছে, সেটা তো থামানো যাচ্ছে না।
তাহলে দেশে এত বিপুল নারী নির্যাতনের প্রতিকার কি হবে ?
আমি আবার বলছি, নারী নির্যাতনের সমস্যাটা অন্য দেশের ঘারে দিয়ে লাভ নেই, সমস্যাটা আসলে আমাদের মধ্যে। আমাদের ইচ্ছা বা উদ্যোগের মধ্যে।
আমরা কি আমাদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলাম কি না ?
যদি আমরা আমাদের নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারি, তখন তাদেরকে কাজে পাঠাবো, সেটা দেশে হোক অথবা বিদেশে।
আমি দেখেছি, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যান, তখন প্রথমেই তিনি বলেন- আমাদের দেশে আমরা নারীর ক্ষমতায়ন করেছি। নারীরা ঘর থেকে বেড়িয়ে কাজ করছে।”
কথা হলো- তিনি নারীদের ঘর থেকে বের করে বাইরে কাজ করার হিসেব দিয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন,
কিন্তু যে নারীগুলো ঘর থেকে বের হলো, তাদের নিরাপত্তা কি তিনি নিশ্চিত করতে পেরেছেন ?
একজন নারীকে নিরাপত্তা ব্যতিরেকে ঘর থেকে বের করায় সাফল্যের দাবীদার কতটুকু ?
আমি কিন্তু এই সমস্যার সমাধানও দিয়েছিলাম-
বলেছিলাম- নারীদের জন্য পৃথক সবকিছু চালুর মাধ্যমে এই সমস্যার প্রায় শতভাগ সমাধান করা যায়।
এক্ষেত্রে নারীদের প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নারীরাই সার্ভিস দেবে। যেমন
নারীদের জন্য পৃথক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুধু নারী শিক্ষক ও নারী স্ট্যাফ নিয়োগ দেয়া,
নারীদের জন্য পৃথক হাসপাতালে শুধু নারী ডাক্তার ও নারী স্ট্যাফ নিয়োগ দেয়া,
নারীদের জন্য পৃথক মার্কেট, শপিং কমপ্লেক্স, কাচাবাজারে শুধু নারী বিক্রেতা রাখা,
নারীদের জন্য নারী দিয়ে বিচারবিভাগ তৈরী করা,
নারীদের জন্য পৃথক যানবাহনে নারী স্ট্যাফ (ড্রাইভার নয়) নিয়োগ দেয়া,
নারী চাকুরীজীবীদের বাচ্চা রাখার সুবিধার্থে নারীদের দিয়ে ডে কেয়ার খোলা ইত্যাদি।
এরকম করা গেলে দেশেই নারীদের কর্মের চাহিদা ও মূল্য দুটোই প্রচুর পরিমাণে বাড়বে।
তখন নারীদের বিদেশে কর্ম করতে যাওয়ার আর কোন প্রয়োজন কেউ দেখাতে পারবে না।