ব্যয়বহুল চার লেনের সড়কগুলো দেশের মানুষের জন্য নয়, বিদেশীদের জন্য তৈরী হচ্ছে-৫১

Related image
ব্যয়বহুল চার লেনের সড়কগুলো দেশের মানুষের জন্য নয়, বিদেশীদের জন্য তৈরী হচ্ছে-
এই বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার পর একজন জানালো ডিফেন্স রিলেটেড কোন একটা পেইজে এসব পোস্টের বিরোধীতা করা করা হয়েছে।
আসলে ঘটনা হলো, আমি ঐ পোস্টে ছবি হিসেবে “ঢাকা-মাওয়া-ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে’র ছবি দেখিয়েছিলাম, আর সেই সড়কটির নির্মাণ করার দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ পূর্ত সংস্থা ‘এসডব্লিউও’। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রজেক্টের কন্ট্রাকটর হিসেবে যারা বেনিফিসিয়ারি হবে, তারা তো সঙ্গতকারণেই প্রজেক্টের পক্ষে বলবে এবং আমার পোস্টের বিরুদ্ধে বলবে, এটাই স্বাভাবিক। তবে আমাকে তো কন্ট্রাকটরের উপকারিতার কথা চিন্তা করে পোস্ট দিলে হবে না, আমাকে আম জনতার উপকারের কথা চিন্তা করেই পোস্ট দিতে হবে।
অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন,
১) বিদেশী ইনভেস্ট ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। উদাহরণ অমুক অমুক রাষ্ট্র বিদেশী ইনভেস্ট নিয়ে উপকৃত হয়েছে।
২) বিদেশী ইনভেস্ট আসলেই বোধহয় আমাদের কর্মদক্ষ লোকবল তৈরী হবে।
যারা এ ধরনের মনোভাব পোষণ করেন, তাদের প্রতি সসম্মানে আমি ভিন্নমত পোষণ করছি।
প্রথমত, বিদেশী ইনেভেস্ট ছাড়া দেশ উন্নত করা সম্ভব নয়, আমি এই চিন্তাধারার ঘোর বিরোধী। কারণ আমার দেশে যে সম্পদ আছে, মেধা আছে, সুযোগ আছে, সেটার কি আমি সবটুকু ব্যবহার করে আগে দেশকে উন্নত করার চেষ্টা করেছি ? যদি না করি, আগে সেটা করে দেখি, আমার দেশকে উন্নত করতে পারি কি না। সেই চেষ্টা না করে আমি কেন প্রথমেই ভেবে নেই বিদেশী ইনভেস্ট আসলে আমার দেশ উন্নত হবে, এছাড়া হবে না ?
এবং স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর কেন এমন চিন্তা আসছে ?
দ্বিতীয়ত, বিদেশী ইনভেস্ট আসলেই আমাদের কর্মদক্ষ লোক তৈরী হবে, এ ধরনের চিন্তাধারা সম্পর্কে আমার আগে প্রশ্ন হবে-
বাংলাদেশের গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন সেক্টরের বড় বড় পদগুলোতে কেন ৫ লক্ষ ভারতীয় চাকুরী করছে? কেন তাদেরকে উচু বেতন দিয়ে চালানো হচ্ছে ? দেশী ইনভেস্ট হওয়ার পরও সেখানে কেন এত বছর পরও কর্মদক্ষ লোক তৈরী হচ্ছে না ? তাহলে সমস্যা কি ইনভেস্টে, না আমাদের সিস্টেমে ??
আগে পড়ালেখার সিস্টেম ডেভেলপ করুন, এরপর নিজেদের বাড়ির যে ঘাটতি ৫ লক্ষ ভারতীয় দখল করে আছে, সেটার যায়গা পূরণ করুন।
তারপর বিদেশী ইনভেস্ট আসলে আমাদের কর্মদক্ষ লোক তৈরী হবে সে গল্প শুনাইয়েন।
আরেকটি কথা, শুধু ‘বিদেশী ইনভেস্ট’ ‘বিদেশী ইনভেস্ট’ করেন, কিন্তু দেশী ইনভেস্টকারীদের সেই সুযোগ দিয়েছেন কি ?
কিছুদিন আগে শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলো ইনভেস্ট আনার জন্য। তখন একটা খবরে দেখলাম, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫০ হাজার বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ইনভেস্ট করেছে। বাংলাদেশে যদি সঠিক ব্যবসায়ীক পরিবেশ থাকতো, তবে অবশ্যই ঐ ব্যবসায়ীরা দেশেই ইনেভেস্ট করতো। (https://bit.ly/2OUxFdU)
এই যে দেশী ব্যবসায়ীরা দেশ ফেলে বিদেশে ইনভেস্ট করছে, কেন ?
কারণ দেশে ব্যবসায়ীদের প্রতি সরকারের বিরূপ নীতি।
সরকার বিদেশী ব্যবসায়ীদের প্রতি যতটুকু সফট, দেশী ব্যবসায়ী বা বিনিয়োগকারীদের প্রতি ততটাই হার্ড।
এ সম্পর্কে আমি একটা লেখা লিখেছিলাম, পড়লে আশা করি অনেকটা ক্লিয়ার হবে (https://bit.ly/2OtZWJf)।
আসলে সত্যিই বলতে, আমি বিদেশী ইনভেস্টের বিরুদ্ধে নই।
আমার বক্তব্য হলো- বিদেশীরা আসুক, সমস্যা নেই। কিন্তু তার আগে আমাদের নিজের অবস্থা সুসংহত হোক।
আমাদের দেশী ব্যবসায়ীদের অবস্থা শক্তিশালী হোক, আমাদের পড়ালেখা/গবেষণার একটা অবস্থান তৈরী হোক।
নয়ত আমাদের অবস্থা যদি দুর্বল হয়, তখন বিদেশী কোম্পানিগুলো এসে আমাদের সাহায্যকারী না হয়ে শাসন করা শুরু করবে, যাকে বলা হচ্ছে কর্পোরেট শাসন বা কর্পোরেটোক্রেসি।
মূল কথা হলো- “ঘর পোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়”। এক সময় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এ এলাকায় ব্যবসা করতে এসেছিলো, কিন্তু সেই সুযোগ দেশ দখল করেছিলো ২০০ বছরের জন্য। তাই এখনও বিদেশী বড় বড় ব্যবসায়ীরা এসে যে আমাদের দেশ (অর্থনৈতিকভাবে) দখল করবে না, তার কি গ্যারান্টি?
হ্যা তারা আসুক, সেটাতে আমি না করছি না, কিন্তু তার আগে আমাদের অবস্থান দৃঢ় করে নেয়ার একটা কাজ আছে। তাদের সম্রাজ্যবাদী নীতিকে সামাল দিতে আমাদের পৃথক উন্নতনীতি থাকতে হবে। যদি আমরা দুর্বল হই, তবে তারা ব্যবসার কথা বলে ঢুকে উল্টো আমাদের শাসন করা শুরু করবে, তখন কি করবেন ?
আরেকটি বিষয়-
অমুসলিম রাষ্ট্রে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের আগমন, আর মুসলিম রাষ্ট্রে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের আগমণের মধ্যে পার্থক্য থাকবেই।
সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটরা কোন দেশে আগমন ঘটলে সে দেশের সংস্কৃতির উপর আলাদা প্রভাব বিস্তার করে, এবং তাদের সুবিধামত পরিবর্তণ করে নেয়। যেটা অমুসলিম রাষ্ট্রগুলোর মেনে নিতে কোন সমস্যা থাকে না। কিন্তু মুসলিম রাষ্ট্রগুলো জনগণের জন্য সে সব নিয়মনীতি ও সংস্কৃতি মেনে অনেকটা অসুবিধা, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে চরম দ্বন্দ্ব হতে পারে। তাছাড়া সারা বিশ্বে এখন মুসলিমবিদ্বেষ একটা ট্রেন্ড হয়ে দাড়িয়েছে। তাই সম্রাজ্যবাদী ব্যবসায়ীরা তাদের জ্ঞাতিভাইদের দেশে গেলে যতটুকু নরম থাকবে, আমাদের মুসলিম দেশে আসলে আমাদের প্রতি ততটুকু নরম বা সহনীয় হবে, এটা ভেবে নেয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। তাই আগে নিজের খুটির জোর বৃদ্ধি করুন, তারপর তাদের ডাকুন।
কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে দেশীয় ব্যবসায়ী, কৃষি, শিল্পকারখানাসহ সকল উৎপাদন খাতকে ফেলে দিয়ে (বিশ্বাস না হয় ফিল্ড লেভেলে খবর নিয়ে দেখুন) বিদেশী ব্যবসায়ীদের আসার জন্য দেশকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। এটা তো কোন ভালো লক্ষণ হতে পারে না। এটা শুধু সাধারণ ব্যবসায়ীক আগমণ না বলে, কর্পোরেট দখলদায়িত্ব বা কর্পোরেটোক্রেসি’র প্রতিষ্ঠার পূর্ব লক্ষণের সাথেই মিলে যায়। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাকে এ সত্য কথাগুলো বলতেই হচ্ছে, কেউ ব্যক্তিগতভাবে কষ্ট পেলে ক্ষমা করবেন।