নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘটে গেছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে।এন.সি-৪৮

Related imageনৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘটে গেছে, যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে।
শ্রমিকদের অনেক দাবী, তবে মূল দাবীটা হলো- তাদের বেতন বাড়াতে হবে।
সরকার ২০১৬ সালে তাদের নতুন বেতন কাঠামো ঘোষনা করলেও সেটা নৌযান মালিকরা এখনও জারি করেনি।
শ্রমিকরা সে বেতন কাঠামো জারি চায়।
বর্তমানে যেভাবে দেশে সব কিছুর দাম বৃদ্ধি চলছে, তাতে সবাই চায় তাদের বেতন বৃদ্ধি পাক, নয়ত সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আর সেই কষ্ট থেকেই নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট।
বাংলাদেশে কর্পোরেটোক্রেসি’র প্রভাবে মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এই নৌযান শ্রমিক ধর্মঘট তারই অংশবিশেষ।
এখন যদি শ্রমিকদের দাবী অনুসারে মালিকরা বেতন বৃদ্ধিও করে, তবে সেই টাকা মালিকরা নৌযানের ভাড়া বৃদ্ধি করে পুষিয়ে নেবে, যার প্রভাব পড়বে জনগণের উপর। জনগণের নৌ পরিবহণ ভাড়া বাড়বে, আবার যেসব খাদ্য নৌপথে পরিবহন হয়, সেগুলোর মূল্য বাড়বে, যার ভূক্তভোগী হবে জনগণ।
আরেকটি খররে দেখলাম, পেট্রোল পাম্পগুলো ধর্মঘটে যাচ্ছে।
পেট্রোল পাম্পগুলোর অনেক দাবী, তবে মূল ঘটনা যেটা জানলাম-
সরকার পেট্রোল পাম্প মালিকদের কাছে নতুন করে ১ কোটি টাকা জামানত চায়।
এর আগে অবশ্য তাদের বড় অংকের টাকা জামানত দিয়েই পেট্রোল পাম্পের অনুমতি নিতে হয়েছে।
কিন্তু তারপরও সরকার নতুন করে জামানত রাখতে বলছে, কারণ সরকারের খুব টাকার দরকার।
এছাড়া সরকার পেট্রল পাম্পদের গ্যাসের লাইন বন্ধ করে দিয়ে তাদের দিয়ে আমদানি করা এলপিজি গ্যাস বিক্রি করতে চাপ দিচ্ছে, এতে পাম্পগুলোর ঝামেলা আরো বেড়ে গেছে।
সরকার ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল আর এক্সপ্রেসওয়ে বানাতে গাটের সব টাকা খরচ করে ফেলেছে, এখন এখান-সেখান থেকে থাবা মেরে টাকা তুলে নিচ্ছে। পেট্রল পাম্পগুলোর কাছে নতুন করে জামানত চাওয়া তারই লক্ষণ। এখন যদি পেট্রল পাম্পগুলো সরকারের দাবী মেনে নতুন জামানত রাখেও, তবে দায় কিন্তু গিয়ে পড়বে জনগণের জ্বালানি খরচের উপর। ফলশ্রুতিতে বাড়বে জনগণের সড়ক পরিবহন ভাড়া, বাড়বে নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন দ্রব্যের দামও (কারণ সেগুলোও সড়ক পথে পরিবহণ হয়)।
আবার অনেক পাম্ব জামানত না দিতে পেরে বন্ধ হয়ে যাবে, তখন বাড়বে বেকারত্ব। অনেক পরিবারকে না খেয়ে থাকতে হবে তখন।
এদিকে, আজকে ছিলো জাতীয় আয়কর দিবস।
আয়কর দিবসকে কেন্দ্র করে একটা কথাই বার বার উচ্চরিত হয়েছে-
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাড়ছে,
রাস্তাঘাট, ফ্লাইওভার, সেতু, বিদ্যুৎকেন্দ্র বাড়ছে,
সেই ব্যয় সামাল দিতে সবাইকে আয়কর ঠিক মত দিতে হবে।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, উন্নত বিশ্বে সব মানুষ আয়করের আওতায়, সবাই ঠিক মত আয়কর দেয়।
ঠিক বলেছেন, উন্নত বিশ্বের মানুষ ইনকাম করলে আয়কর দেয়,
আবার চাকুরী হারালে সরকার বসিয়ে বসিয়ে তাদের পুরো ফ্যামিলি খাওয়ায়।
এখন বাংলাদেশে সরকার যার থেকে আয়কর নিচ্ছে,
সেই মানুষটি যদি কখন চাকুরী হারিয়ে বেকার হয়, তবে তাকে কি সরকার আর্থিক নিরাপত্তা দিবে ?
যদি না দেয়, তবে উন্নত বিশ্বের সাথে তুলনা করে লাভ কি বলুন ??
বর্তমান নিয়ম অনুসারে কেউ যদি মাসে ২১ হাজার টাকার বেতন পায়, তবে তাকে আয়কর দিতে হবে।
কিন্তু এখন দ্রব্যমূল্য আর বাড়িভাড়া এত বেশি যে ৫০ হাজার টাকা বেতন পেলেও সব টাকা হাওয়া হয়ে যায়, সেখানে ২১ হাজার টাকা বেতন পেলে তো তাকে ঋণ করে চলতে হচ্ছে। তারও যদি আয়কর নিয়ে টানাটানি শুরু করে সরকার, তবে সে তো মৌলিক চাহিদা থেকে বঞ্চিত হবে।
তবে সব কথার শেষ কথা-সব আন্দোলন, ধর্মঘট আর বিশৃঙ্খলা বন্ধ হয়ে যাবে, যদি একটি শ্লোগান বাস্তবায়ন করা যায়,
সেটা হলো- “উন্নয়ন চাই না, খরচ কমান”।
কথিত উন্নয়নের নামে ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল, বন্দর, বিদ্যুৎকেন্দ্র, সেতু, ট্যানেল, এক্সপ্রেসওয়ে বানানোর নামে যে অপচয় হচ্ছে, সেগুলো যদি বন্ধ করা যায়, তবে অতিরিক্ত টাকার চাহিদাও হবে না, আর জনগনের খরচও বাড়বে না।
তখন যদি দেশীয় শিল্পে আর কৃষির দিকে নজর দেয়া যায়, তবে খাদ্য দ্রব্যসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম অর্ধেকে নামিয়ে আনা সম্ভব,
আর রাজধানী বিকেন্দ্রীকরণ করলে বাড়িভাড়াও অর্ধেকে নেমে আসবে।
বাড়িভাড়া আর খাদ্রক্রয়ের পর যদি আপনার হাতে পর্যাপ্ত টাকা থাকে,
তখন আপনি নিজেই ‘উন্নয়ন’ ক্রয় করে নিতে পারবেন, সরকারকে আর কষ্ট করে আপনার উন্নয়ন করে দিতে হবে না।