ভুল পথে এগোচ্ছে দেশ ।সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক পলিসি দেশকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। এন.সি-৭৩

Related image
ভুল পথে এগোচ্ছে দেশ
সরকারের অর্থনৈতিক বিষয়ক পলিসি দেশকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদের ভুল সিদ্ধান্তে দেশ ভৌগলিক স্বাধীনতা হারায়, কিন্তু এক্ষেত্রে ভুল সিদ্ধান্তে দেশ অর্থননৈতিক স্বাধীনতা হারাতে বসেছে। তবে বেশ লক্ষণীয় হচ্ছে, যারা অনেক ক্ষেত্রে সরকারের সমালোচনা করে, তারাও সরকারের অর্থনৈতিক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা করছে না, মুখ বন্ধ করে বসে আছে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য- কৃষিনির্ভরতা কমিয়ে শিল্পায়নে গুরুত্ব দিতে হবে।
কিন্তু কথা আসতে পারে, সরকার শিল্পায়নে এত গুরুত্ব দিলেও দেশী শিল্প-কারাখানার অবস্থা কি ?
দেশী শিল্প-কারখানার মালিকরা কি লাভজনক পরিস্থিতিতে আছে ?
নাকি তাদের অবস্থায় যায় যায় ?
এই একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজলে বুঝবেন- আসলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের গুরুত্ব আসলে কোন দিকে।
তবে বিডিনিউজ২৪ এর এই সংবাদটি (https://bit.ly/2CG365Z) পড়লে পুরোপুরি হিসেবে মেলাতে পারবেন,
দেশকে যে বিদেশী কর্পোরেটোক্রেসি’র দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, যা ১০০% হিসেব মতই হচ্ছে।
অর্থাৎ বিদেশী বিনিয়োগ বান্ধব করা হচ্ছে দেশকে, সাধারণ জনগনকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করে ভালো মানের দাস বানানো হচ্ছে। কিন্তু দেশকে স্ব-নির্ভর করার কোন উদ্যোগ নেই।
এ পলিসিতে কৃষিকে ধ্বংস করে দেশের আপামর উৎপাদন খাতকে ধ্বংসকে দেশকে রফতানিমূখী খাদ্য নির্ভর করা হবে, যার আলটিমেট রেজাল্ট অতি উচ্চ খাদ্যমূল্য যা এক পেয়াজ দিয়ে প্রমাণ পাওয়া যায়। এছাড়া অত্যধিক জীবন ব্যয়ের কারণে দেশের মানুষ কিভাবে ছটফট করছে, তা যে কোন পরিবারের কাছে জিজ্ঞেস করলে বুঝতে পারবেন।
শেখ হাসিনা কার বুদ্ধিতে দেশকে এক অজানার পথে পাড়ি জমিয়েছেন,তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু এই পলিসিতে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর দেশ নতুন করে পরাধীনতার শিকল পড়তে যাচ্ছে। যেখানে স্বাধীনতার ৪৮ বছর দেশ আরো পরনির্ভরতা হ্রাসের দিকে যাওয়ার কথা ছিলো, সেখানে কেন কর্পোরেটোক্রেসির শিকলে জর্জরিত হতে হবে দেশকে ?
শেখ হাসিনা, কৃষিনির্ভরতা হ্রাস করে শিল্পায়নের কথা বলেছেন।
অথচ কৃষি প্রধান দেশ হওয়ার কারণে তার বলা উচিত ছিলো কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের কথা।
কারণ আমার যে অঢেল কাচামাল আছে, সেটাকে পূজি করে শিল্প গড়ি,
তাহলেই তো আমার জন্য শিল্প করা অনেক সহজ হয়ে যাবে,
প্রয়োজনে কৃষিভিত্তিক শিল্পায়নের উপর প্রচুর-রিসার্চ-গবেষণা করা হোক,
কোন কৃষি পণ্যকে কিভাবে কোন শিল্পের কাচামাল বানানো যায়, সেটায় সহযোগীতা হোক।
একটা উদাহরণ দেই, যেমন ধরুন-
বাংলাদেশে প্রচুর টমেটো হয়। শীতের শেষে টমেটো প্রচুর হওয়া এবং দাম পরে যাওয়াতে এমন অবস্থা হয় যে, মাঠের টমেটো মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়। অথচ কয়েক মাস টেমেটোর দাম আবার উঠতে থাকে এবং কেজিতে শত’র উপরে গিয়ে দাম ঠেকে। এসময় ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে টমেটো আসে আর প্রায় ৮-৯ মাস বাংলাদেশের বাজারে ব্যবসা করে। অথচ বাংলাদেশী টমেটোগুলো যদি সরকারিভাবে হিমাগারে সংরক্ষণ করা যেতো, তবে ভারতীয় টমেটো বাংলাদেশে ব্যবসা করতে পারতো না, বাংলাদেশে টমেটো দিয়েই সারা বছর চালানো সম্ভব ছিলো। আবার দেশ-বিদেশে টমেটোর সসের প্রচুর চাহিদা। যে পরিমাণ টমেটো মাঠে পচে যায়, সেটা যদি আনা যেতো তবে বিরাট টমেটো সস শিল্প গড়ে তোলা সম্ভব ছিলো, সেখানে হতে পারতো প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান। [পড়তে পারেন, কৃষি ভিত্তিক শিল্প নিয়ে একটি লেখা-https://bit.ly/374XU9Z]
তবে এর জন্য যে উদ্যোগ, গবেষণা ও মন-মগজ দেয়া প্রয়োজন সেটা কারো ব্যক্তি পক্ষে করা সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার সরকারি উদ্যোগ। কিন্তু সরকার মন মগজ দিয়ে রাখছে, বিদেশী ব্যবসায়ীরা এসে বাংলাদেশে শিল্প কারখানা গড়ে বাংলাদেশের মানুষকে উদ্ধার করবে। কিন্তু কথা হলো- স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর কেন এই চিন্তা আসবে ? আমাদের স্ব-নির্ভর হওয়ার সুযোগ থাকতে, আমরা কেন জোর করে পরনির্ভর হবো ?? আর তাছাড়া আমাদের দেশেই তো ২০-২২ কোটি লোকের বাজার আছে, যা কয়েকদিন পর বৃদ্ধি পেয়ে ২৫-৩০ কোটি লোক হবে। সেই বাজারে আমরা সম্পূর্ণ দেশীয় নির্ভর স্বয়ং সম্পূর্ণ না হয়ে আমরা কেন শুধু বিদেশে রফতানি নিয়ে পড়ে আছি। দেশের মার্কেটে আমরা স্বয়ং সম্পূণর্ হতে পারলেই তো, বিরাট কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলা সম্ভব।
আমি জানি, আম-জনতার এই সব আলোচনা ভালো লাগে না। কিন্তু তবুও এ আলোচনা আমি করবো। কারণ সরকারের এই কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি’র সাইড এফেক্ট হিসেবে ইতিমধ্যে সবকিছুর খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে, বাসাভাড়া, খাবার খরচ, যাতায়াত ভাড়া, সরকারী বিল-খাজনা, ফি, ট্যাক্স, মাসুল এত বেশি যে মানুষ সাধারণ মানুষ জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে। অপরদিকে উৎপাদনশীল খাত (যেমন: কৃষি, ব্যবসা, দেশী শিল্প) গুলো প্রায় ধ্বংসের কাছাকাছি। কৃষক কৃষি ছেড়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ব্যবসায়ীরা ঋণের বোঝায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে, আর দেশী শিল্প কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায়। এগুলো সব হচ্ছে সরকারের বিদেশ নির্ভর কর্পোরেটোক্রেসি পলিসির কারণে, যা দেশকে নতুন করে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হওয়ার কথা জানান দিচ্ছে, যদিও আম-জনতা এখনও নির্বিকার।