কক্সবাজারে সার্ফিং নাকি খ্রিস্টান মিশনারী কার্যক্রম ?
সম্প্রতি ন’ ডরাই নামক একটি মুভির কারণে কক্সবাজারের সার্ফিং এর বিষয়টি সবার নজরে এসেছে। সাামাজিক ও ধর্মীয় রীতি-নীতির কারণে কক্সবাজারের মুসলিম নারীরা সার্ফিং করতে যেতে পারছে না বা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এটাই মুভির মূখ্য বিষয়।
আসলে এ অভিযোগটা এই প্রথম নয়, এর আগেও আন্তর্জাতিক বহু মিডিয়াতে এ বিষয়টি এসেছে যে- মুসলিম ধর্মীয় রীতি-নীতির কারণে কক্সবাজারের মেয়েরা সার্ফিং এ বাধার সম্মুখিন হচ্ছে।
এ বিষয়ে-
১) ২০১৬ সালের ১২ অক্টোবর France 24 নামক মিডিয়া একটা রিপোর্ট করে যার সারমর্ম-
বীচে মুসলিম নারীরা ট্রাডিশনাল পোষাক, বোরকা হিজাব পরে। তবে এই রীতিতে পরিবর্তন আনতে একদল নারী-পুরুষ কাজ করছে। তবে মেয়েদেরকে ধর্মীয় কারণে ঘরে বন্দি করে রাখছে তাদের পরিবার, তাদেরকে আসতে বাধা দিচ্ছে। (https://youtu.be/AUOyjoauRxk)
বীচে মুসলিম নারীরা ট্রাডিশনাল পোষাক, বোরকা হিজাব পরে। তবে এই রীতিতে পরিবর্তন আনতে একদল নারী-পুরুষ কাজ করছে। তবে মেয়েদেরকে ধর্মীয় কারণে ঘরে বন্দি করে রাখছে তাদের পরিবার, তাদেরকে আসতে বাধা দিচ্ছে। (https://youtu.be/AUOyjoauRxk)
২) ২০১৭ সালের ৩১ জুলাই মার্কিন টিভি চ্যানেল PBS NewsHour এ সম্পর্কে একটি রিপোর্ট করে। যেখানে তারা স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষকের সাক্ষাৎকার নেয়, মাদ্রাসা শিক্ষক বলে- “নারীদের এভাবে সার্ফিং এর নামে বেপর্দা হওয়া হারাম।” মার্কিন টিভিতে মুসলিম নারীদের সার্ফিং করার বিষয়টিকে ইসলামীক নিয়ম-নীতির বিরুদ্ধে জয়লাভ হিসেবে দেখানো হয়। এবং বলে এ বিষয়টি ফান্ডিং করছে মার্কিন মিশনারী সংস্থা সার্ফিং দ্য নেশন। তারা প্রথম পুরষ্কার হিসেবে মেয়েদের ২৪৮ ডলার দেয়। (https://youtu.be/FfmOiomYvXw)
সম্প্রতি যে ‘ন ডরাই’ নামক মুভিটার কথা বলা হচ্ছে, প্রচার হচ্ছে এটা নাকি নাসিমা নামক একটি মেয়ের সত্য জীবন কাহিনী অবলম্বনে। মূলতঃ এই নাসিমা নামক মেয়েটি হলো সার্ফিং দ্য নেশন নামক খ্রিস্টান মিশনারী ক্লাবের সদস্য। এই ক্লাব থেকে ২০০৭ সাল থেকে নাসিমাকে সার্ফিং শেখানো হয় (https://youtu.be/ZpYxOpKvNjA?t=42)। পরবর্তীতে ২০১০ সালে নাসিমাকে শিশু বয়সে পুরষ্কৃত করে লাইম লাইটে নিয়ে খ্রিস্টান মিশনারী সার্ফিং দ্য নেশনের প্রধান টম বাওয়ার। এ সম্পর্কে ২০১০ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর ডেইলি স্টার পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। (https://www.thedailystar.net/news-detail-155637)
এখানে টম বাওয়ার নামটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। টম বাওয়ার-ই ১৯৯৭ সালে সার্ফিং দ্য নেশন নামক সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করে। সে ও তার স্ত্রী কিন্ডি বাওয়ার এর প্রধান। (https://stn.global/about/)
টম বাওয়ার আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপের অধিবাসী। বাংলাদেশে টম বাওয়ার সার্ফিং দ্য নেশন নামে থাকলেও আমেরিকায় সে কাজ করে “সার্ফার চার্চ’ নামে। বাওয়ার ফ্যামিলির এর উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে তারা সাফিং এর মাধ্যমে বাইবেলের প্রচার করবে। (https://www.surferschurch.com)
টম বাওয়ার আমেরিকার হাওয়াই দ্বীপের অধিবাসী। বাংলাদেশে টম বাওয়ার সার্ফিং দ্য নেশন নামে থাকলেও আমেরিকায় সে কাজ করে “সার্ফার চার্চ’ নামে। বাওয়ার ফ্যামিলির এর উদ্দেশ্যের মধ্যে আছে তারা সাফিং এর মাধ্যমে বাইবেলের প্রচার করবে। (https://www.surferschurch.com)
বাংলাদেশের প্রথম পুরুষ সার্ফার বলা হয়, জাফর আলমকে। জাফর আলম তার সার্ফিং এর ইতিহাস সম্পর্কে বলে- “২০০১ সালে তার একদল পশ্চিমা লোকের সাথে বীচে দেখা হয়। এর মধ্যে একজনের নাম টম বাওয়ার। টম বাওয়ার হাওয়াই এর খ্রিস্টান মিশনারী, যে সার্ফিং দ্য নেশন প্রতিষ্ঠা করছে খ্রিষ্টিয়ান ধর্ম বিস্তারের জন্য। সার্ফিং দ্য নেশন তাকে ডোনেট করে, তাকে বিদেশে নিয়ে যেতে চায়। তবে তাদের অন্যতম শর্ত হলো সার্ফিং টিমে নারী সদস্য থাকতে হবে। (https://surfingbangladesh.com/surf-history/)
উল্লেখ্য জাফর আলমকে পরবর্তীতে অ্যানী নামক এক খ্রিস্টান মিশনারী সেবিকার সাথে বিয়ে দিয়ে ক্যালিফোর্নিয়া নিয়ে যাওয়া হয়। (https://www.express.co.uk/…/Why-I-risked-my-own-life-to-hel…)
সেই থেকে সার্ফিং করলে বিদেশ যাওয়ার সুযোগ আছে বলে রব উঠে, যা কক্সবাজারের দরিদ্র নারীদের জন্য টোপ হিসেবে ব্যবহৃত করে মিশনারীরা। খ্রিস্টান মিশনারী টম বাওয়ার আয়োজিত সার্ফিং প্রতিযোগীতায় যেসব নারী প্রথম হয়েছে (নাসিমা বা শবে মেহরাজ) তাদের সাক্ষাৎকার শুনলে বুঝবেন, তারা বলে- তাদের জীবনের মূল লক্ষ্য হলো বিদেশে যাওয়া। (পূর্ববর্তী লিঙ্কের ভিডিওগুলো দেখুন)
মূলত এ সব পশ্চিমা খ্রিস্টান মিশনারী ক্লাবগুলো বিভিন্ন মুসলিম দেশের সমুদ্র সৈকতে গিয়ে স্থানীয় মেয়েদের সার্ফিং শেখানোর নাম দিয়ে তাদের মুসলিম ধর্মীয় নীতি-রীতির বিরুদ্ধচারণ করতে শেখাচ্ছে এবং পোষাকে পরিবর্তন এনে পশ্চিমা ধাচের পোষাকে উব্ধুদ্ধ করছে (ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রায় স্থানীয় নারীদের সার্ফিং এর নামে পোষাক পরিবর্তন-https://youtu.be/H_fay6k21S8)।
আর সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ন’ডরাই নামক মুভিটি রিলিজ হয়েছে স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায়। উদ্দেশ্য তাদের কার্যক্রমে স্থানীয় ধর্মীয় বা সামাজিক রীতিনীতি যে বাধা তৈরী করছে সেটা যেন আর করতে না পারে। তারা যেন নির্ভিগ্নে তাদের মিশনারী কার্যক্রম চালাতে পারে।