ন ডরাই নামক মুভির প্রধান চরিত্রের নাম আয়েশা হলে সমস্যা কি ? এন.সি- ৪২

Related image
ন ডরাই নামক মুভির প্রধান চরিত্রের নাম আয়েশা হলে সমস্যা কি ?
অনেক নারীই তো ইসলাম ধর্ম মতে চলে না, তাহলে তাদের নামও যদি এমন হয়, তখন ?
এর উত্তর খুব সোজা।
উত্তর হলো- একজন শিশুর নাম রাখা হয় শিশুকালে, সে বড় হয়ে কেমন হবে তা কেউ জানে না। সুতরাং তার নামের সাথে যদি মিলে যায় তবে সেটার ইচ্ছাকৃত হয় না।
অথচ আপনারা যে মুভি বানালেন, সে মুভির চরিত্রটি খ্রিস্টান মিশনারী দ্বারা পরিচালিত একটি মেয়ের জীবন ঘটনা, যে স্থানীয় ধর্মীয় রীতিনীতির বিরুদ্ধচারণ করবে, এই কাহিনী তো আপনাদের জানা, তবে কেন ঐ নামটি ধর্মীয় বিশিষ্ট ব্যক্তির নাম অনুসারে রাখলেন ? শিশুর জন্মের সময় করা নাম তো ইচ্ছাকৃত নয়, কিন্তু আপনার কাজটা তো ইচ্ছাকৃত।
এবার তো আমিও প্রশ্ন করতে পারি, আপনি নারী সার্ফার নাসিমার চরিত্র নিয়ে সিনেমা বানিয়ে নাম আয়েশা কেন রাখলেন ? চরিত্রের নাম নাসিমাই রাখতেন। নাকি ইচ্ছা করেই চুলকানি তৈরীর জন্য কাজটা করেছেন ? আমার জানা মতে এই মুভির স্ক্রিপ্ট লিখেছে কলকাতার শ্যামল সেনগুপ্ত।
আর ইসলামবিরোধী চরিত্রগুলোকে মুসলমানদের নবীর স্ত্রী’র নামে ইচ্ছাকৃত নামকরণ এটা কলকাতার দাদাবাবুদের অনেক পুরাতন স্বভাব। তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই কাজটা করে। ২০১৭ সালের ঈদে কলকাতা থেকে যৌথ প্রযোজনায় দুটি মুভির রিলিজ হয়েছিলো। একটি নাম ছিলো বস-২ অন্যটির নাম নবাব। দুটি মুভিতেই আইটেম সং নামক খোলামেলা চরিত্রে অশ্লীল নৃত্যের জন্য আনা হলো দুটি চরিত্রকে আনা হয়। যার একটি নামকরণ করা হয় আয়েশা (অভিনয়ে : নুসরাত ফারিয়া), অন্যটির সালমা (অভিনয়ে : শুভশ্রী)। অথচ এই দুটি নামই মুসলমানদের শেষ নবীর স্ত্রীদের নামের সাথে যুক্ত।
স্বাভাবিকভাবে কথা আসতে পারে, দূর্গা, কালী, স্বরসতী, লক্ষী নামের তো অভাব ছিলো না, এত নাম থাকতে যৌথ প্রযোজনার ছবিতে কেন এই নামগুলো সংযুক্ত করা হলো ???
আমি জানি, এরপরও কিছু বেকুব বলবে- “হয়ত এমনি এমনি হয়ে গেছে।”
কিন্তু আমি বলবো–
আরে বেকুব তুমি দুনিয়ার সব কিছু এমনি এমনি মনে করলেও ভারতীয় দাদাবাবুরা কোন কিছুই এমনি এমনি করে না, কারণ তারা নামের ব্যাপারে খুবই সচেতন। যেমন-
১) সাইফ-কারিনার সন্তানের নাম তৈমুর রাখাতে হিন্দুরা কিন্তু ব্যাপক প্রতিবাদ করেছিলো। এমন কি শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতিবাদের মুখে সাইফ তার সন্তানের নাম পরিবর্তন করবেন বলে ঘোষণা দেন। উল্লেখ্য তৈমুর নামটি মুসলিম সেনাপতি তৈমুর লং এর নাম অনুসরণে করায় ক্ষোভ তৈরী হয় ভারতীয় হিন্দুদের মধ্যে।
২) বছরখানেক আগে দিল্লীর বিখ্যাত সড়ক আওরঙ্গজেব সড়কের নাম পাল্টিয়ে রাখা হয় আবদুল কালাম সড়ক। কারণ আওরঙ্গজেব ছিলেন মোঘল শাসক, যিনি মারাঠা নেতা শিবাজীকে দমন করেছিলেন। উল্লেখ্য ‘আবদুল কালাম’ নামটি ভারতে নামটি শুনতে মুসলমানী হলেও, তা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালামের নাম, যে ছিলো উগ্রহিন্দুত্ববাদীদের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড।
৩) বছরখানেক আগে ভারতের কট্টর হিন্দুবাদীদল আরএসএস ভারতের তিনটি শহরের নাম পাল্টানোর প্রস্তাব করেছে। আহমেদাবাদ এর পরিবর্তে কারানভাটি, হায়দ্রাবাদের পরিবর্তে ভাগ্যনগর এবং আওরঙ্গবাদের পরিবর্তে স্বামীজি নগর রাখার প্রস্তাব দেয় ।
৪) দুই বছর আগে ভারতের মুসলিম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দারুল উলুম দেওবন্দের নাম পরিবর্তন করার দাবি করেছে এক বিজেপি নেতা। বিজেপি নেতার দাবি দেওবন্দ পরিবর্তন করে দেওভৃন্দ করার জন্য।
অর্থাৎ আপনি সব কিছু `এমনি এমনি' ভাবলেও, যারা এই নামগুলো রেখেছে, তারা এই নামের বিষয়টি ভালোভাবেই বুঝে এবং ইচ্ছাকৃতই কাজটা বার বার করে, উদ্দেশ্য এই নামগুলো সম্পর্কে খারাপ মনোভাব তৈরী করা। ধরুন, কখন যদি এই ধর্মীয় নামগুলো আপনার সামনে উচ্চারিত হয়, তখন আপনার মানসপটে ভালো চিন্তাধারা তৈরী হওয়ার বদলে ঐ নায়িকার অসৎ চরিত্রটি আপনার দৃশ্যপটে ভেসে আসবে। আপনার এই নামগুলো শুনলে ধর্মীয় মনোভাব তৈরী হওয়ার বদলে অসৎ মনোভাব তৈরী হবে। একই ঘটনা অনলাইন আর্কাইভের ক্ষেত্রে। এই নামগুলো দিয়ে যখন অসৎ চরিত্র নামগুলো বার বার আর্কাইভ হতে থাকবে, তখন নতুন কেউ যখন গুগলে সার্চ দিবে, তখন এসব অশ্লীল চরিত্রের ছবি আসা শুরু করবে, আসল নামটাই খুজে পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ নামগুলোকে অসৎ হিসেবে পরিচিত করাই তাদের উদ্দেশ্য।
তবে বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিলো, এই ধর্মীয় নামগুলোর অপব্যবহার করা সিনেমা নিষিদ্ধ করা। কারণ সরকার প্রধানের নাম নিয়ে যদি এমন করতো, তখন কি হতো ?
এ সম্পর্কে ২০১৩ সালের একটা ঘটনা আছে। যা ঐ সময় দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় খবরটা এসেছিলো। নারায়নগন্জের বাসিন্দা দুবাই ফেরত সেলিম মিয়া একটি বিদেশী কুকুর কিনে এনেছিলো তার বাড়ি পাহাড়া দেবার জন্য । সে শখ করে কুকুরটির নাম রেখেছিলো শেখ হাসিনা । আস্তে আস্তে ঘটনাটি জানাজানি হয়ে সরকারের কানে চলে যায়। পরে বন্দর থানা পুলিশ সেলিম মিয়াকে গ্রেফতার করে। শেখ হাসিনা কিন্তু নিজের নাম নিয়ে উল্টাপাল্টা পছন্দ করে না, অথচ ইসলাম ধর্মীয় নাম দিয়ে খ্রিস্টান মিশনারীরা বিকৃত সিনেমা বানালেও সরকার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো সেটাকে সেন্সর বোর্ডে অনুমতি দেয়, এটাই আশ্চর্যজনক বিষয়।