বাংলাদেশের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা এত দিন বেশ দৃঢ় ছিলো- বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা ভারতের যায়নি এই বক্তব্যে। এন.সি-১৮

বাংলাদেশের মন্ত্রী-মিনিস্টাররা এত দিন বেশ দৃঢ় ছিলো- বাংলাদেশ থেকে সংখ্যালঘুরা ভারতের যায়নি এই বক্তব্যে। বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হচ্ছে, ভারতীয় এমন দাবীর বিপক্ষে তারা বেশ শক্তভাবেই বলেছে-
-বাংলাদেশে হিন্দুরা অনেক শান্তিতে আছে,
-তাদেরকে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সরকারী চাকুরী দেয়া হয়েছে,
-পূজা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করতে দেয়া হয়েছে,
-১ জন হিন্দু নির্যাতন হলে, তার বদলে ১০ জন মুসলমানকে শায়েস্তা করা হয়েছে।
সুতরাং বাংলাদেশী হিন্দুদের ভারতের যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
জবাব প্রায় শতভাগ সত্য হওয়ায় এর বিরুদ্ধে বেশি শব্দ করতে পারেনি ভারত সরকার।
কিন্তু হঠাৎ করে আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ১৮০ ডিগ্রি বেকে বলে বসলেন- বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে একটা সময় ভারতে গিয়েছিলো। তারা যদি দেশে আসতে চায়, তবে তাদের ফিরিয়ে নেয়া হবে। (https://bit.ly/379YFxp)
প্রথমেই বলতে হয়, এবার আওয়ামীলীগের সম্মেলনে অসুস্থ ওবায়দুল কাদেরের পুনঃরায় সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কথা ছিলো না। কিন্তু তিনি অসুস্থ হওয়া পরও কেন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হলেন সেটা নিয়েই অনেকের প্রশ্ন এসেছে। আমি অবশ্য চিন্তা করেছিলাম- পুনঃনির্বাচিত হয়েই তিনি ভারতীয় লবিং এর প্রতি শুকরিয়া জ্ঞাপন স্বরূপ এমন বিবৃতি দিলেন কি না?
যাই হোক, অনেকে হয়ত বলতে পারেন, তিনি তো বিএনপি আমলে হিন্দু নির্যাতনের কথা বলেছেন। তিনি হয়ত বিএনপির সাথে বিজেপি’র সম্পর্ক খারাপ করার জন্য এই বক্তব্য দিয়েছেন।
হতেও পারে সেটা। কিন্তু তিনি তো বিএনপি ল্যাং মারতে গিয়ে পুরো দেশকে ল্যাং মেরে দিছেন, সেটার হিসেব দেশবাসীর রাখা উচিত। এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি কিন্তু প্রিয়া সাহার বক্তব্যকেই সমর্থন করে নিলেন।
এখন আওয়ামী সরকারের গ্রিন সিগনাল পেয়ে ভারতীয় হিন্দুরা যদি বাংলাদেশে আসতে চায়, তবে প্রথম যে কথাটা উঠবে, সেটা হলো তারা কোথায় ফিরবে ? রোহিঙ্গারা তো কক্সবাজারের কয়েকটা উপজেলা দখল করে উঠেছে। হিন্দুরা কোথায় উঠবে ?
হিন্দুদের দাবী হলো ভারতে চলে যাওয়ার আগে তারা প্রায় ৫০ লক্ষ বিঘা (৬৭০০ বর্গ কিলোমিটার ) অর্পিত ও দেবোত্তর সম্পত্তি ফেলে রেখে গেছে, যা বর্তমানে মুসলমানরা ভোগ দখল করছে। অর্থাৎ ভারতীয় হিন্দুরা যদি বাংলাদেশে আসে তাবে তারা নিজেদের জমির দাবী নিয়েই আসবে এবং তাদের দাবী পূরণ করতে ৫০ লক্ষ বিঘা সম্পত্তি বাংলাদেশের মুসলমানদের ছেড়ে দিতে হবে। উল্লেখ্য প্রিয়া সাহার দাবীর পর গোবিন্দ প্রামাণিক ভারতের যুগশঙ্খ পত্রিকার কাছে ঠিক এই কথাটাই বলেছিলো করেছিলো। (https://bit.ly/2ENzmFg)
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, “দূর ! ওবায়দুল কাদের বললেই কি হয়ে গেলো?”
আমার উত্তর হলো- হলেও হতে পারে। কারণ-
২০০১ সালে মুরগী কবিরের করা ভুয়া হিন্দু নির্যাতনের ভিডিও ডকুমেন্টারি যদি ২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গায় মুসলিম নিধনের নিয়ামক হতে পারে,
২০১১ সালে করা বাংলাদেশের আবুল বারাকাতের ফালতু গবেষণা (প্রতিদিন ৬৩২ জন বাংলাদেশী হিন্দু ভারতের পালিয়ে যাচ্ছে) যদি ২০১৯ সালে এসে মোদি সরকারের মুসলিম বিদ্বেষী এনআরসি/নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের পক্ষে দলিল হতে পারে,
তবে খোদ ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদকের বিবৃতি “বাংলাদেশে হিন্দুরা নির্যাতিত হয়ে ভারতের চলে গেছে এবং তারা আসলে ফেরত নেয়া হবে” এটাও তো তাদের জন্য বড় দলিল হতে পারে।
আর তাছাড়া এটাতো একটা ধারাবাহিক প্ল্যানের অংশবিশেষ।
- ১৯৭৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর চাপে বঙ্গবন্ধু শত্রু সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি নামকরণ করেন।
- ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় এসে ২০০১ সালে ক্ষমতা ছেড়ে যাওয়ার একবারে শেষ সংসদ অধিবেশনে (২০০১ সালের এপ্রিলে) অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পন আইন জারি করে।
- ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে ফের আওয়ামী সরকার হিন্দুদের অর্পিত সম্পত্তি আইনে সংশোধন করে এবং বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় হিন্দুদের তা বুঝিয়ে দিতে থাকে। এ সম্পর্কে ২০১২ সালের ২৬মে আনন্দবাজার পত্রিকা খরব করে, - “বাংলাদেশে যাচ্ছেন মালিকররা”
খবরের বিস্তারিত- “দেশ ভাগের সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ফেলে আসা জমি-বাড়ির মালিকদের একটি প্রতিনিধি দল আগামী মাসে বাংলাদেশে যাচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি ‘অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যপর্ণ আইন’ বাস্তবায়ন করে দখল হয়ে যাওয়া জমি-বাড়ি হিন্দুদের ফেরাতে তৎপর হয়েছে। তার পরেই বাংলাদেশ সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মালিকরা। সম্পত্তি ফেরত সংক্রান্ত বিষয়টি দেখাশোনার জন্য আন্তর্জাতিক একটি সলিসিটর ফার্মের সঙ্গে কথাবার্তাও বলা হচ্ছে। বাংলাদেশে দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তির মালিকদের সংগঠন ‘সোসাইটি অফ এনিমি অ্যান্ড ইভাকুই প্রপার্টিজ ইন বাংলাদেশ’-এর সম্পাদক শচীপতি মৈত্র জানিয়েছেন, দীর্ঘ আন্দোলনের পরে এই প্রথম তাঁরা হিন্দুদের দখল হয়ে যাওয়া সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সাড়া পেয়েছেন।
(https://bit.ly/374c4as)
২০১৯ সালে এসে যখন এনআরসি/নাগরিক সংশোধনী বিল হলো, তখন কিন্তু ভারতে থাকা হিন্দুদের বাংলাদেশের জমিজমা পাওয়ার দাবী পুরণের কথাটা প্রথম এসেই যায়। ঠিক সেই সময় ওবায়দুল কাদেরের হিন্দুদের চলে যাওয়ার পক্ষে কথা বলা সেই ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ কি না, যা নিয়ে চিন্তা করার দরকার আছে। কারণ ভারতীয় জাতীয়তাবাদীরা অখণ্ড ভারত প্রতিষ্ঠার যে স্বপ্ন দেখে, তা বাস্তবায়ন করতে গেলে বাংলাদেশকেও ভারতীয় সীমানায় ঢুকতে হবে, আর তার জন্য প্রাথমিক ভাবে প্রয়োজন বাংলাদেশে হিন্দুদের জনসংখ্যা বাড়ানো।
আমার মনে হয়, ভারতের যদি এনআরসি/নাগরিক সংশোধনী বিল হওয়ার পর ভিটেমাটিহীন হওয়ার আশঙ্কায় মুসলমানরা আন্দোলনে মাঠে নামে, তবে ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের পর বাংলাদেশের মুসলমানদের মাঠে নামার দরকার আছে। কারণ এই ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্য বাংলাদেশেও বিরাট অংকের মুসলমানকে ভিটেমাটাহীন করার ইঙ্গিত দেয়।