ছোটবেলায় একটা কার্টুন দেখতাম, নাম ছিলো ক্যাপ্টেন প্ল্যানেট। এই কার্টুনগুলো তৈরী করা হয়ছিলো, একটা বাচ্চাকে ছোটবেলা থেকে উগ্র পরিবেশবাদী হিসেবে বানানোর জন্য। অর্থাৎ ধোয়া দেখলেই ভাঙ্গতে হবে, কল-কারাখানা দেখলেই গুড়িয়ে দিতে হবে। কিন্তু মানুষ বাচতেও যে ধোয়া আর কল-কারখানার দরকার আছে, সেটা এই কার্টুনগুলো এড়িয়ে যায়। অনেকেই জানে, এই উগ্র পরিবেশবাদীদের পেছনে রয়েছে ভিন্ন রাজনৈতিক ও তাদের নিজস্ব ব্যবসার উদ্দেশ্য।
যাই হোক,সম্প্রতি আমাদের সরকারের মাথায় পর্যটনের ভুত চেপেছে। সে নদী ভিত্তিক পর্যটন করবে। নদীর পাড়ে ৫০ মিটার এলাকা খালি করবে, সেখানে মসজিদ থাকুক, কারখানা থাকুক, বাড়িঘর থাকুক সব ভেঙ্গে গুড়িয়ে হাটার রাস্তা করবে, মানুষ নির্মল বায়ু সেবন করবে। কিন্তু গাধার বাচ্চাগুলো এটা বুঝে না, শুধু নির্মল বায়ু সেবন করলেই হয় না, মানুষের পেট ভরার জন্য ইনকামেরও দরকার আছে। আর নদীর তীরে গড়ে ওঠা কলকারখানাগুলো হলো সেই সোর্স অব ইনকাম।
সম্প্রতি এক বৈঠকে মাথামোটা নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী ইটিপি চালু না থাকলে শিল্প কারখানা বন্ধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। কথা হলো, এই মাথামোট লোকটা ইটিপি কাকে বলে, তার খরচ কতো, কারখানাগুলোর সেটার ব্যয়বহন করতে পারবে কি না, কিংবা ইটিপি কেন জরুরী এগুলো বুঝে বলে আমার মনে হয় না।
পাশাপাশি এই কারখানাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কতটুকু বাচিয়ে রেখেছে, কারখানাগুলো বন্ধ হলে কতলোক বেকার হবে, সেই ধারণাও তার নেই।
পাশাপাশি এই কারখানাগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কতটুকু বাচিয়ে রেখেছে, কারখানাগুলো বন্ধ হলে কতলোক বেকার হবে, সেই ধারণাও তার নেই।
ইটিপি হলো ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট। একটি সাধারণ মানের ইটিপি তৈরীতে খরচ হয় ৪০-৮০ লক্ষ টাকা, আর একটি বায়োলজিক্যাল ইটিপি স্থাপনে ব্যয় হয় ২-৩ কোটি টাকারও বেশি, যা ছোট ছোট কারখানার পক্ষে করা একেবারেই সম্ভব না। তবে শুধু এককালীন খরচ করলেই হয় না, এই সিস্টেম রানিং করতে যে হিউজ পরিমাণ বিদ্যুৎ ও আনুসাঙ্গিক ব্যয় হয়, তাতে অনেক বড় কারখানার ইটিপি থাকলেও তারা সেটা রানিং করতে চায় না, উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির উদ্দেশ্য।
ইটিপি কেন দরকার ?
কারখানা থেকে যে তরল বর্জ্য নির্গত হয়, সেটাকে ইটিপি রিসাইক্লিং করে আবার পুনরায় বিশুদ্ধ পানিতে রুপান্তর করে। যেসব দেশে পানির সংকট, বছরে সব সময় পানি পাওয়া যায় না, পানির মূল্য অনেক বেশি তাদের জন্য ইটিপি দরকার বেশি, কারণ তারা ইটিপি মাধ্যমে রিসাইক্লিং করে বিশুদ্ধ পানি ফিরে পেতে পারে।
কারখানা থেকে যে তরল বর্জ্য নির্গত হয়, সেটাকে ইটিপি রিসাইক্লিং করে আবার পুনরায় বিশুদ্ধ পানিতে রুপান্তর করে। যেসব দেশে পানির সংকট, বছরে সব সময় পানি পাওয়া যায় না, পানির মূল্য অনেক বেশি তাদের জন্য ইটিপি দরকার বেশি, কারণ তারা ইটিপি মাধ্যমে রিসাইক্লিং করে বিশুদ্ধ পানি ফিরে পেতে পারে।
ঘটনা হলো, আমাদের সদ্য আধুনিক একটি মহলের একটা রোগ আছে, তারা ইউরোপ-আমেরিকায় কোন কিছু দেখলেই সেটাকে মর্ডান কিছু ভেবে বাংলাদেশে তার কপি বসাতে চান। আর তাতেই সমস্যা তৈরী হয়। তারা এটা বুঝতে চায় না, সব কিছুর কপি হয় না। বাংলাদেশের পরিবেশ, পরিস্থিতি, আর্থ সামাজিক অবস্থা ইউরোপ-আমেরিকা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, এটা তারা ভুলে যান। বাংলাদেশে তো পানি’র মূল্য এত বেশি নয় এবং বছরে ১২ মাস পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায়। তাছাড়া আমাদের আর্থ সামাজিক অবস্থা এত উন্নত নয় যে আমরা তাদের মত ইটিপির খরচ বহন করতে পারবো। এখন জোর করে সরকার চাপিয়ে দিতে পারবে, কিন্তু আমাদের কলকারখানাগুলো সেটা বহণ করতে পারবে না, ফলে আলটিমেটলি সেগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
এখানে একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবে আসে, আচ্ছা সরকার নিজেই কি ইটিপি চালু করতে পেরেছে কোথাও ?
উল্লেখ্য, এর আগে এই ইটিপির নাম করে হাজারীবাগে সম্ভবনাময় চামড়া শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। তারা নাকি সাভারে ইটিপি চালু করে দিবে। অথচ সরকার নিজেই বেশ কয়েক বছর পার হরেও ইটিপি সিস্টেম সেখানে এখনও দাড় করাতে পারেনি।
উল্লেখ্য, এর আগে এই ইটিপির নাম করে হাজারীবাগে সম্ভবনাময় চামড়া শিল্প পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার। তারা নাকি সাভারে ইটিপি চালু করে দিবে। অথচ সরকার নিজেই বেশ কয়েক বছর পার হরেও ইটিপি সিস্টেম সেখানে এখনও দাড় করাতে পারেনি।
আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে পশ্চিমা ইটিপি সিস্টেমের কপির কোন দরকার নাই।
আমাদের অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে, কিন্তু সেটা হবে, আমাদের দেশের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায়। এক্ষেত্রে যেটা করতে পারে, কলকারখানাগুলোর দায়িত্ব হবে তারা জৈব বর্জ্য ও অজৈব বর্জ্য পার্থক্য করবে। এরপর যে জৈব বর্জ্য আছে সেগুলো নির্দিষ্ট নদীতে ফেলতে পারবে, কিন্তু অজৈব বর্জে্র জন্য সরকার একটি পৃথক সুয়োরেজ সিস্টেম দাড় করাবে, যা দেশের ম্যাপের উপর থেকে নিচে পাইপের মাধ্যম দিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত আসবে। এরপর সেগুলো পাইপের মধ্য দিয়েই সমুদ্র ফেলে দেয়া হবে। তবে অজৈব বর্জ্য নিয়ে আরো রিসার্চ করা যেতে পারে, যেন সেগুলো থেকে উৎপাদনশীল কিছু আনা যায় কি না। এছাড়া প্লাস্টিক বা পলিথিনের পুন ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে, যত বেশি পুনঃব্যবহার করা যাবে, তত বেশি পরিবেশের জন্য ভালো।
আমাদের অবশ্যই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা থাকবে, কিন্তু সেটা হবে, আমাদের দেশের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও আর্থ সামাজিক অবস্থা বিবেচনায়। এক্ষেত্রে যেটা করতে পারে, কলকারখানাগুলোর দায়িত্ব হবে তারা জৈব বর্জ্য ও অজৈব বর্জ্য পার্থক্য করবে। এরপর যে জৈব বর্জ্য আছে সেগুলো নির্দিষ্ট নদীতে ফেলতে পারবে, কিন্তু অজৈব বর্জে্র জন্য সরকার একটি পৃথক সুয়োরেজ সিস্টেম দাড় করাবে, যা দেশের ম্যাপের উপর থেকে নিচে পাইপের মাধ্যম দিয়ে সমুদ্র পর্যন্ত আসবে। এরপর সেগুলো পাইপের মধ্য দিয়েই সমুদ্র ফেলে দেয়া হবে। তবে অজৈব বর্জ্য নিয়ে আরো রিসার্চ করা যেতে পারে, যেন সেগুলো থেকে উৎপাদনশীল কিছু আনা যায় কি না। এছাড়া প্লাস্টিক বা পলিথিনের পুন ব্যবহারের উপর জোর দিতে হবে, যত বেশি পুনঃব্যবহার করা যাবে, তত বেশি পরিবেশের জন্য ভালো।
কথা হলো- সরকারকে বাস্তবমুখী কথা বলতে হবে। আজকাল নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী, নৌ সচিব টাইপের কিছু গাধাকে দেখি দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থা না বুঝে আজগুবি সব কথা বলে। দেশের অর্থনীতি সম্পর্কে এই গাধাগুলোর কোন ধারণা আছে বলে মনে হয় না, প্রজেক্ট বাড়িয়ে শুধু পকেট ভরার ধান্ধা। এই গাধাগুলো যদি নদীর জন্য কিছু করতেই চায়, তবে ভারতকে বলুক, নদীর পানি ছাড়তে। নদীর পানি ছাড়লে নদীতে ফ্লো হবে, তখন অটোমেটিক ময়লা-বর্জ ভেসে সাগরে গিয়ে পড়বে। পানিতে ফ্লো নাই, হুদাই জনগণের বাড়িঘর, কারখানা আর মসজিদ ভেঙ্গে নদীতে গতি আনার মিথ্যা নাটক করতেছে। এগুলোরে ধরে ভালো করে পিটায় ভুত ছাড়ানো দরকার। শালা ভণ্ড।